চলতি অর্থবছরের (২০২২-২৩) প্রথম চার মাসের ধারাবাহিকতায় নভেম্বরেও রাজস্ব আদায়ে নেতিবাচক ধারা থেকে বের হতে পারেনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

অর্থবছরের পঞ্চম মাস নভেম্বরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩ হাজার ৩২৪ দশমিক ৯১ কোটি টাকা কম রাজস্ব আদায় হয়েছে। এতে চলতি অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) রাজস্ব ঘাটতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৭১৩ দশমিক ২৪ কোটি টাকা।

এনবিআরের তথ্য মতে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে এনবিআরের। চলতি অর্থবছরের প্রথম পাচঁ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) এনবিআর রাজস্ব আদায় করেছে এক লাখ ১৫ হাজার ৬২০ দশমিক ৭৭ কোটি টাকা। এ সময়ে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক লাখ ২৫ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। ফলে আলোচ্য সময়ে রাজস্ব ঘাটতি ৯ হাজার ৭১৩ দশমিক ২৪ কোটি টাকা।

নভেম্বর মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছে ২৪ হাজার ৭০৩ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরের একই সময়ে আদায় হয়েছিল ২২ হাজার ৬৪২ কোটি টাকা। এ হিসাবে আলোচ্য মাসে রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি ৯ দশমিক ১০ শতাংশ। তবে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় কমেছে রাজস্ব আদায়। চলতি বছরের নভেম্বরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৮ হাজার ২৮ কোটি টাকা।

এ সময়ে আদায় হয়েছে ২৪ হাজার ৭০৩ কোটি টাকা। ফলে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১১ দশমিক ৮৬ শতাংশ কমেছে রাজস্ব আদায়।

রাজস্ব বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, নভেম্বরে আমদানি ও রফতানি থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৮ হাজার ১২৩ কোটি টাকা। যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ বেশি। এ খাতে প্রবৃদ্ধি হলেও নভেম্বরের এই আয় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৭ দশমিক ৫৯ শতাংশ কম। নভেম্বরে এ খাত থেকে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯ হাজার ৮৫৭ কোটি টাকা। এ হিসাবে আদায় কমেছে এক হাজার ৭৩৩ কোটি টাকা।

একইভাবে স্থানীয় পর্যায়ে মূসক থেকে আদায় হয়েছে ৯ হাজার ৯৮৬ দশমিক ৫৪ কোটি টাকা। যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৫ দশমিক ৬৬ শতাংশ বেশি। তবে প্রবৃদ্ধি হলেও নভেম্বরের এই আয় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৮ দশমিক ৮২ শতাংশ কম। নভেম্বরে এ খাত থেকে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০ হাজার ৯৫২ কোটি টাকা।

ফলে ৯৬৫ কোটি টাকা কম আদায় হয়েছে। আর আয়কর ও ভ্রমণ কর বাবদ নভেম্বরে আয় হয়েছে ৬ হাজার ৫৯৩ কোটি টাকা। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬২৫ কোটি টাকা কম। এই মাসে এ খাত থেকে ৭ হাজার ২১৯ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্য ছিল।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট বাবদ সবচেয়ে বেশি আদায় হয়েছে। এ খাতে আদায় হয়েছে ৪৪ হাজার ১৮৩ দশমিক ৮৩ কোটি টাকা।

আলোচ্য মাসে এ খাত থেকে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৫ হাজার ১১৭ কোটি টাকা। ফলে এ খাতে ঘাটতি রয়েছে ৯৯৩ কোটি টাকার। যদিও ৫ মাসের এই আয় গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৬ দশমিক ১৮ শতাংশ বেশি।

এদিকে, আলোচ্য সময়ে আমদানি ও রফতানি পর্যায়ে শুল্ক-কর আদায় হয়েছে ৩৮ হাজার ৬০ কোটি টাকা। যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশ বেশি। তবে আলোচ্য সময়ের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ঘাটতি রয়েছে ৬ হাজার ৫৩৬ কোটি টাকা। এ খাত থেকে নভেম্বরে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৪ হাজার ৫৯৬ কোটি টাকা।

অন্যদিকে প্রথম ৫ মাসে আয়কর ও ভ্রমণ কর থেকে এসেছে ৩৩ হাজার ৩৭৬ দশমিক ৯৪ কোটি টাকা। এ খাতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২ হাজার ১৮৪ কোটি টাকা কম আদায় হয়েছে। এ খাতে রাজস্ব বোর্ডের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৫ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা। তবে যা আদায় হয়েছে তা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ বেশি।

গত অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসের তুলনায় চলতি বছরের একই সময়ে রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৩ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ।

গত বছরের নভেম্বর পর্যন্ত রাজস্ব আহরণের পরিমাণ ছিল এক লাখ ২ হাজার ২৬৪ দশমিক ৮২ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে আদায় হয়েছে এক লাখ ১৫ হাজার ৬২০ দশমিক ৭৭ কোটি টাকা।